জীবন-জীবিকার তাগিদে অর্থের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ইসলামে বিষয়টি আরো তাৎপর্যপূর্ণ। ইসলামে অর্থবিত্ত মহান আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত। এ নিয়ামত অর্জনে ইসলাম তার সবল সক্ষম প্রত্যেক অনুসারীকে উৎসাহী করেছে। তবু মানবজীবনে চাহিদার কোনো শেষ নেই। যার অর্থকড়ি যত বেশি আছে, তার চাহিদাও তত বেশি। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘মানুষ যতই বৃদ্ধ হয়, তার মধ্যে দুটি বস্তু যুবক হতে থাকে—দীর্ঘায়ু ও অর্থমোহ।’
মানুষের মুখে মাটি না পড়া পর্যন্ত চাহিদা বাড়তেই থাকে। মরার আগ পর্যন্ত মানুষ চাইতেই থাকে। যেহেতু মানুষের এই চাহিদা কখনো শেষ হওয়ার নয়, তাই তা সীমিত রাখার মধ্যেই মানবজীবনে সুখ আসে। মানুষের হাজার বছরের অভিজ্ঞতা যেসব অব্যর্থ পরামর্শ দিয়ে চলার পথকে সহজ করেছে, মিতচারী জীবনচিন্তা এর অন্যতম একটি। এই যে প্রতিদিন রোজগারের নেশায় লাখ লাখ মানুষ নামছে—স্বপ্ন ও সাধে তারা প্রায় সবাই উচ্চাভিলাষী। কিন্তু অভিলাষের লক্ষ্যমাত্রা ও স্বপ্নের উচ্চবিন্দু কয়জন স্পর্শ করতে পারে? তাই বলা যায়, আয় ও উপার্জন মানুষের ইচ্ছাধীন নয়।
সুখের সন্ধানে মানুষ আজ ব্যাকুল হয়ে ফিরছে। সব কিছুতেই একটা অপূর্ণতা ও খাই খাই ভাব দেখা যায়। চারদিকে বিরাজ করছে হাহাকার। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী জীবনধারায় সাদাসিধে ভাব নিয়ে আসা। অল্পতেই তুষ্ট থাকা। অল্পে তুষ্ট থাকলে জীবন আরো উপভোগ্য হয়ে উঠবে। ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যমপন্থার জীবনদর্শন ইসলাম। বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ি কোনোটিই অনুমোদিত নয় ইসলামে। পবিত্র কোরআনুল কারিমে মুসলমানদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘এমনিভাবে আমি তোমাদের মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৪৩)
তাই কৃপণতা ও অপব্যয় রোধ করতেই হবে। কার্পণ্য ও অপব্যয়ের মাঝখানে রয়েছে মিতব্যয়িতা। এটাই আদর্শ সমাজের চলার পথ। চলার পথ যুক্তিবাদী মানুষের। হাজার বছরের অভিজ্ঞতা এই পথকে করেছে শাণিত। সহজে সম্মানে এই পথ সমান প্রার্থিত। মানবতার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মধ্যপন্থায় চলে সে অভাবে পড়ে না।’ (গাজালি, ইহয়াউল উলুম : ৩/২৫৫)
অন্য একটি হাদিসের ভাষ্য আরো উদ্দীপক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘উত্তম জীবনাচার, সুন্দর পথ এবং মধ্যপন্থা নবুয়তের ৭০ ভাগের একটি।’ (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৪৬৮)
মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, ‘খরচে মধ্যপন্থা জীবিকার অর্ধেক; মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব আকলের অর্ধেক আর উত্তম প্রশ্ন ঈমানের অর্ধেক।’ (আল-মাকাসিদ : হাদিস : ১৪০)
বলার অপেক্ষা রাখে না, মিতব্যয়িতার দুই প্রান্ত আছে। একটি কার্পণ্য আর অপরটি অপচয়। দুটিই ঘৃণ্য ও অনাকাঙ্ক্ষিত। কার্পণ্যের প্রতি অগাধ ঘৃণা জানিয়ে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুমিন বান্দার মধ্যে দুটি চরিত্রের সমাবেশ হতে পারে না। কৃপণতা ও মন্দ স্বভাব।’ (আল আদাবুল মুফরাদ : হাদিস : ২৮২)
আর আল্লাহ তাআলা কৃপণকে সতর্ক করেছেন এভাবে—‘আর কেউ কার্পণ্য করলে এবং নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে আর যা উত্তম তা অস্বীকার করলে—তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পথ। এবং তার সম্পদ তার কোনো কাজে আসবে না, যখন সে ধ্বংস হবে।’ (সুরা লাইল, আয়াত : ১১)
Leave a Reply